ইতিহাসের স্মরণীয় কয়েকটি যুদ্ধ

ইতিহাসের স্মরণীয় কয়েকটি যুদ্ধ

কলিঙ্গের যুদ্ধ (খ্রি. পূ. ২৬১) : এ যুদ্ধে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ রাজকে পরাজিত করেন। এ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে সম্রাট অশোকের মনে ভাবান্তর হয়। এর পরিণামে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন।

এ্যাকটিভিয়াসের যুদ্ধ (খ্রি. পূ. ৩১) : এ নৌযুদ্ধে এ্যাকটিভিয়াসের নিকট রাণী ক্লিওপেট্রা ও এন্টনির যৌথ নৌবাহিনীর পরাজয় ঘটে।

ভারত-চীন সীমান্ত যুদ্ধ (১৯৬২ খ্রি.) : চীন ভারতের লাদাখ অঞ্চল আক্রমণ করলে এ যুদ্ধ বাধে। চীন ভারতের কিছু এলাকা দখল করে নেয়। পরে যুদ্ধ বিরতির ফলে চীন তার সৈন্য অপসারণ করে। চীন এখনো ভারতের বহু এলাকা দখল করে আছে।

পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রি.) : কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তানের এ যুদ্ধ বাধে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বিখ্যাত তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১ খ্রি.) : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক সামরিক জান্তা ঢাকায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে এ যুদ্ধ বাধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিবাহিনী গঠন করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পরে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে ভারতও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮ খ্রি.) : ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে উভয় দেশের তেল সমৃদ্ধ এলাকা ও তেল শোধনাগার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ইরান শর্তহীনভাবে জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ২০ আগস্ট তা কার্যকর হয়।

ক্যাডেসিন যুদ্ধ (৬২৭ খ্রি.) : এ যুদ্ধে মহাবীর রুস্তমের হাতে আরবরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ (১৫২৬ খ্রি.) : এ যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী বাবরের হাতে পরাজিত ও নিহত হন এবং বাবর ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ (১৫৫৬ খ্রি.) : এ যুদ্ধে দিল্লীর সম্রাট আকবরের সেনাপতি বৈরাম খাঁর হাতে হিমু পরাজিত ও নিহত হন।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১ খ্রি.) : এ যুদ্ধে মারাঠাগণ আহম্মদ শাহ আবদালীর হাতে পরাজিত হয়।

বান্নোকবার্ন যুদ্ধ (১৩১৪ খ্রি.) : রবার্ট ব্রুসের নেতৃত্বে এই যুদ্ধে স্কটল্যান্ড বাহিনী ইংরেজদেরকে পরাজিত করে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে।

শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (১৩৩৮-১৪৩৩ খ্রি.) : ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড ফ্রান্সের সিংহাসন দাবী করলে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে এ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ বাধে। শেষ পর্যন্ত বীর কন্যা জোয়ান অব আর্কের বীরত্বের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম (১৭৭৬-১৭৮৩ খ্রি.) : জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলে এবং আমেরিকা ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

ট্রাফালগার যুদ্ধ (১৮০৫ খ্রি.) : এ যুদ্ধে ইংরেজ নৌ-সেনাপতি নেলসনের কাছে ফরাসি ও স্পেনের মিলিত বাহিনী পরাজয় বরণ করে। কিন্তু নেলসন নিজে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান!

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-১৮৫৬ খ্রি.) : এ যুদ্ধে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও তুরস্কের যৌথ বাহিনীর নিকট রাশিয়ার জার পরাজয় বরণ করে।

ওয়াটার লুর যুদ্ধ (১৮১৫ খ্রি.) : এ যুদ্ধ নেপোলিয়ান ইংরেজদের হাতে পরাজিত হয়ে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৬-১৯৭৩ খ্রি.) : উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যে প্রথম এ যুদ্ধ বাধে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষ সমর্থন করে। অপরদিকে চীন ও রাশিয়া উত্তর ভিয়েতনামকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে থাকে। এ যুদ্ধে দক্ষিণ ভিয়েতনাম পরাজিত হয়। বর্তমানে দুই ভিয়েতনাম এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮ খ্রি.) : অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্ডিন্যান্ডের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালে এ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এ যুদ্ধে এক পক্ষে ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া এবং আরো কতকগুলো মিত্র রাষ্ট্র। এ যুদ্ধে ইংল্যান্ডের মিত্রপক্ষ জয় লাভ করে। ১৯১৮ সালে বিখ্যাত ভার্সাই চুক্তির মধ্য দিয়ে এ বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) : ১৯৩৯ সালে হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। হিটলারের পক্ষে ছিল জাপান ও ইতালি। অপরপক্ষে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। এ সম্মিলিত মিত্র বাহিনীর কাছে হিটলার পরাজিত হন এবং আত্মহত্যা করেন! এ মহাযুদ্ধেই আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে!

আরব-ইসরাইল যুদ্ধ : এটি মূলত প্যালেস্টাইনী (ফিলিস্তিন) গেরিলা ও ইসরাইলীদের যুদ্ধ। প্যালেস্টাইনী গেরিলারা নিজেদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই যুদ্ধ করছে। গেরিলাদের সরাসরি সাহায্য করছে আরব রাষ্ট্রসমূহ। প্রথম ১৯৪৮ সালে আরবদের সাথে ইসরাইলের সংঘর্ষ বাধে। ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন ও সাহায্য করছে। প্যালেস্টাইনীদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এখনও অব্যাহত আছে!

ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ : ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক কুয়েত দখল করে নেয় এবং কুয়েতকে ইরাকের অঙ্গ বলে ঘোষণা করে। জাতিসংঘ কুয়েত হতে ইরাকী বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য আহবান জানানোর পরও ইরাক তার বাহিনী সরিয়ে নেয় নি। পরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে গঠিত বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায় এবং ইরাকী বাহিনীকে কুয়েত হতে হটিয়ে দেয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ইরাক ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেয় এবং যুদ্ধের অবসান ঘটায়।

বসনিয়া-হারজেগোভিনিয়ার যুদ্ধ : ১৯৯২ সালের এপ্রিলে বসনিয়া-হারজেগোভিনা যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্র কাঠামো থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এরপর থেকে বসনিয়া-হারজেগোভিনার মুসলমানদের (মোট জনসংখ্যার ৪৪%) সাথে সার্বিয়ার উস্কানিতে অর্থোডক্স খ্রিস্টান সার্বদের (মোট জনসংখ্যার ৩৩%) ও রোমান ক্যাথলিক ক্রোটদের (মোট জনসংখ্যার ১৭%) দ্বিমুখী যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়! কিন্তু সার্ব ও ক্রোটরা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষে নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। অবশেষে জাতিসংঘ ও ন্যাটোর তত্ত্বাবধানে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়াকে তিনটি অংশে বিভক্ত করে মুসলিম, সার্ব ও ক্রোয়েটদেরকে দিয়ে দেয়া হয়।